কম খরচে কিভাবে ভ্রমণ করা যায় এবং ভ্রমণ পরিকল্পনা ...

 


কম খরচে কিভাবে ভ্রমণ করা যায় এবং ভ্রমণ পরিকল্পনা করার পূর্বে যে বিষয়গুলো  নিয়ে ভাবতে হবে তার একটা মোটামোটি ধারনা পাবেন এই লেখা থেকেঃ-

 

১।তথ্যসংগ্রহঃ-

 

কোথাও ভ্রমণের পরিকল্পনা করার সময় প্রথম যে ধাপটা আসে তা হচ্ছে যেখানে ভ্রমণে যাবেন সেই যায়গা সম্মন্ধে যথেষ্ট তথ্য সংগ্রহ করা। যারা এই কাজটি  ভালভাবে করতে পারে তারাই পারে কম খরচে ভালোভাবে ভ্রমণ শেষ করে আসতে। আপনি যদি না জানেন কোন রাস্তায় গেলে বা কোথায় থাকলে খরচ কম হবে তাহলে তো আপনি খরচ কমাতে পারবেন না। আর এই কারণগুলোর জন্যই একই যায়গা থেকে কেউ ঘুরে আসে ১০০০০ টাকায় আবার কেউ ঘুরে আসে ৬০০০ টাকায়। এই জন্যই তথ্যসংগ্রহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর একটা ভুল আমি বেশিরভাগ মানুষকেই করতে দেখেছি(যারা নিয়মিত ভ্রমনকারি তারা এই ভুলটা করে না) কোথাও যাওয়ার আগে সেই যায়গার আবহাওয়া প্রকৃতি সম্মন্ধে না জানা।একটা উদাহরণ দেই

 

গতমাসে(১৩-২৩ আগস্ট) মানে ঈদের ছুটিতে দার্জিলিং গিয়েছিলাম,   ওইখানে যাইয়া পরিচিত একজনের সাথে দেখা। উনি খুব আফসোস করে বলতেছে ভাই সিকিম থেকে ঘুরে আসলাম কিন্তু বরফ দেখতে পারলাম না, আর ল্যান্ড স্লাইডিং এর জন্য সব স্পট যাইতেউ পারিনি তাই ভাবলাম দার্জিলিং থাইকা একটু ঘুইরা যাই।এখন আপনি একটু ভাবুন- বর্ষাকালে পাহাড়ি রাস্তায় লেন্ড স্লাইডিং হওয়া টা স্বাভাবিকআর বর্ষাকালে বরফ না থাকাটাই স্বাভাবিক। তাই যাওয়ার আগে এই বিষয়গুলো ভালোভাবে খোঁজ নিতে হবে।

 

২।খরচঃ-

 

আপনি যত কম খরচে ভ্রমণ করতে পারবেন ততো বেশি যায়গা ভ্রমণ করতে পারবেন। তাই খরচের কথাটা সবসময় মাথায় রাখতে হবে।খরচের কথা মাথায় রাখবেন, তার মানে এই না যে আপনি না খাইয়া বা না ঘুমাইয়া থাকবেন। প্ল্যান করার আগে ভালোভাবে খোঁজ নিলে আপনি জানতে পারবেন কিভাবে খরচ কমানো যাবে।

 

) যাতায়তঃ-  

 

আপনি যদি একা ভ্রমণ করতে চান তাহলে আপনাকে যাওয়ার আগে খোঁজ নিতে হবে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এর কি ব্যবস্থা আছে।আপনি একা ভ্রমণ করলে আপনাকে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করতে হবে তার মানে আপনার প্ল্যান অভাবেই সাজাতে হবে। আর যদি গ্রুপ ট্যুর হয় তাহলে অবশ্যই খোঁজ নিবেন যায়গায় গাড়ি কত সিট এর হয়। যেমন- টেক্সি সিটের আবার জীপ / জণ যাওয়া যায়। তাই প্ল্যান করার আগে এই জিনিসগুলো ভালোভাবে খোঁজ করুন।

 

) থাকাখাওয়াঃ-

 

থাকার জন্য আমাদের মাথায় একটা জিনিস কাজ করে, জমজমাট যায়গা / মেইন পয়েন্ট এই থাকতে হবে।যেমনঃ- গ্যাংটক গিয়ে সবাই এম জি মার্গ এই থাকতে চায়।কিন্তু আপনি যদি ওখান থেকে / মিনিট হাটেন তাহলে কিন্তু অনেক কম টাকায় ভালো হোটেল পাবেন।আর মন চাইলে হোটেল থেকে আবার মিনিট হেটে এসে এম জি মার্গ সময় কাটিয়ে যাবেন।এই বিষয়টা সব যায়গার ক্ষেত্রে একই, তাই এই বিষয়টা মাথায় রাখবেন। আর খাবারের ব্যাপারটা নিয়ে আমি কথা বলতে চাচ্ছিনা, তবে আমি ব্যাক্তিগতভাবে ভ্রমণে গিয়ে খাওয়ার পিছনে টাকা কম খরচ করি। তবে অবশ্যই একটা জিনিস খেয়াল রাখবেন- খাবারটা হাইজেনিক কি না। কারণ উল্টাপাল্টা খেয়ে অসুস্থ হলে আপনার ভ্রমণ শেষ।

 

) সময় ব্যাবস্থাপনাঃ-

 

আমার মতো যারা চাকরিজীবী তাদের সময়টা একটা বিশাল ফ্যাক্ট হয়ে দাঁড়ায়।আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে লম্বা কোন সরকারি ছুটির মধে যদি প্ল্যান  করেন তাহলে অবশ্যই তার সাথে আগে একদিন ছুটি যোগ করার চেষ্টা করবেন।একদিন আগে যাত্রা শুরু করবেন একদিন আগে যাত্রা শেষ করবেন, তাহলে যাতায়তে আপনার খরচ এবং সময় দুইটাই বাঁচবে।যাওর আগে অবশ্যই খোঁজ নিবেন যেখানে যাচ্ছেন সেখানে ছুটি থাকে কবে যদি আপনার মাথায় কোন সরকারি স্থাপনা বা সরকারি আওতাভুক্ত কোন ঐতিহাসিক জিনিস বা জাদুঘর টাইপের কিছু দেখার প্ল্যান থাকে।

 

) পোশাক-পরিচ্ছেদঃ-

 

যে কথাটা আমি শুরুর দিকে বলেছিলাম, আবহাওয়া প্রকৃতিকোথায় যাবেন ওখানে গিয়ে কি করবেন সেটার উপরে এবং সেখানকার আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে আপনি কি পরবেন সেটা ঠিক করতে হবে। তাপমাত্রা বেশি বা কমের উপরে নির্ভর করে পোশাকের ধরন। এই সব বিষয় মাথায় রেখেই আপনার পোশাক নির্বাচন করতে হবে।

 

) প্রাথমিক চিকিৎসা অন্যান্যঃ-

 

ভ্রমণের সময় অবশ্যই প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম- জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, পেট খারাপ এইসব রোগের ঔষধ এবং এমন কোন ঔষধ যা আপনি নিয়মিত খান এগুলো সঙ্গে নিবেন। বিশেষ করে দেশের বাইরে গেলে অনেক যায়গাতেই ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ঔষধ বিক্রি করে না। আপনি যদি পাহাড়ে বা বনে কেম্পিং বা ট্রেকিং যান তাহলে অবশ্যই মশা/ জোঁক এসবের প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে যাবেন।

 

 

 

একটা কথা মনে রাখবেন। যেখানেই যাবেন পরিবেশ এর দিকে খেয়াল রাখবেন এবং সেখানকার নিয়মকানুনগুলো মেনে চলার চেষ্টা করবেন। আর যদি আপনি দেশের বাহিরে ঘুরতে যান তাহলে মনে রাখবেন আপনি একটি দেশকে রিপ্রেজেন্ট করতে  যাচ্ছেন। আপনার মাধ্যমেই আপনার দেশকে চিনবে।

 

Comments